মুলাদী প্রতিনিধি ॥ বরিশালের মুলাদী উপজেলায় চোর সন্দেহে মনির হোসেন (৪০) নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধী যুবককে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যার পর মৃতদেহ গুম করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মনির হোসেনের স্ত্রী পলি আক্তার ও তার স্বজনরা মুলাদী থানা পুলিশের কাছে এ অভিযোগ করেন। মনির হোসেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মাদের ছেলে। পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামের মৃত খলিল বেপারীর মেয়ে পলি আক্তার সঙ্গে বিয়ে হয় মনিরের। বিয়ের পর থেকে মনির শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন। গত ১২ জানুয়ারি শ্বশুর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন স্ত্রী পলি আক্তার। সন্ধান না পেয়ে ১৬ জানুয়ারি মুলাদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে মনির হোসেনের হাত-পা বাঁধা মাটিতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকা একটি ছবি দেখতে পান পলি আক্তার। এরপর ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজাখুঁজি করলেও স্বামীর আর সন্ধান পাননি। মনির হোসেনের স্বজনরা জানান, ২০০১ সালে পলি আক্তারের সঙ্গে মনির হোসেনের বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। ৮ বছর আগে মনির হোসেন মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। মাঝেমধ্যে অসুস্থ থাকতেন। মনির হোসেনের স্ত্রী পলি আক্তার জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার স্বামী মনির হোসেনের হাত-পা বাঁধা একটি ছবি দেখতে পান। এরপর তিনি থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং ওই এলাকায় খোঁজ নেয়া শুরু করেন। সেখানকার বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে তিনি কথা বলে জানতে পারেন, গত ১২ জানুয়ারি নাজিরপুর ইউনিয়নের বানীমর্দন খেয়াঘাট এলাকার মোতালেব মাতুব্বরের ছেলে আবুল মাতুব্বরের বাড়িতে স্থানীয় লোকজন মিলে তার স্বামী মনির হোসেনকে চোর সন্দেহে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। পলি আক্তারের আশঙ্কা, নির্যাতনে তার স্বামী মনির হোসেনের মৃত্যু হলে নির্যাতনকারীরা মৃতদেহ গুম করে ফেলেন। তা নাহলে এতদিনে মনির হোসেনের সন্ধান পেতেন। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে তার স্বামীকে হত্যা ও মৃতদেহ গুমের ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে তিনি দাবি করেন। নাজিরপুর ইউনিন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) ও বানীমর্দন এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান জানান, গত ১২ জানুয়ারি চোর সন্দেহে মনির হোসেনকে স্থানীয় লোকজন আটক করেছিলেন। তবে মানসিক প্রতিবন্ধী জানতে পেরে ওইদিন রাতেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। মুলাদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমান বলেন, নিখোঁজ মনির হোসেনের সন্ধানে তিনি মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বানীমর্দন খেয়াঘাট এলাকায় যান। স্থানীয় বিভিন্ন লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, গত ১২ জানুয়ারি দরজা খোলা পেয়ে মনির হোসেন স্থানীয় এক বক্তির বাড়িতে ঢুকে পড়েন। এরপর বাড়ির কর্তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এসময় স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে মনির হোসেনের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে রাতে বানীমর্দন খেয়াঘাট এলাকার নৈশপ্রহরীর কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। তিনি আরও জানান, ‘ভোরে নৈশপ্রহরী ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সকালে দেখতে পান মনির হোসেন তার পাশে নেই। স্থানীয় কয়েকজন লোক ভোরে মনির হোসেনকে চলে যেতে দেখেছেন বলে জানান। তাই মনির হোসেন মারা গেছেন বা তার মৃতদেহ গুম করা হয়েছে তা বলা ঠিক হবে না। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। আশা করি, তদন্তে দ্রুত আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
Leave a Reply